মেনোপজ হওয়ার পর কি কি সমস্যা হয়?

প্রথমেই, মেনোপজ (menopause) কী সেটা নিয়ে একটা ক্লিয়ার ধারণা থাকা দরকার মেনোপজ (Menopause) হচ্ছে সেই প্রক্রিয়া, যখন একজন নারীর মাসিক চক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারায়। এটি সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে আগেও হতে পারে। মেনোপজ হওয়ার পর শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে, যা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। একজন মহিলা সাধারণত একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিম্বাণু নিয়ে জন্ম গ্রহন করেন, যেগুলো তার জরায়ুতে সংরক্ষিত থাকে। জরায়ু মহিলাদের শরীরের ইসট্রোজেন এবং প্রজেসটেরন হরমোন তৈরি করে, যেটা প্রতিমাসের মাসিক এবং ওভাল্যুশনকে নিয়ন্ত্রন করে। যখন জরায়ু থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায় এবং মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, তখনই মেনোপজ হয়।

মেনোপজ হওয়ার পর কি কি সমস্যা হয়


মেনোপজের পর সাধারণ সমস্যাগুলো:

হট ফ্ল্যাশ (Hot Flashes)

  • আচমকা শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  • ঘাম হতে পারে, বিশেষ করে রাতে (নাইট সুইট)।
  • হঠাৎ গরম লাগা বা ঠান্ডা লাগা।

ঘুমের সমস্যা (Insomnia)

  • ঘুম আসতে দেরি হওয়া।
  • বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া।
  • পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ক্লান্তি এবং অবসাদ অনুভব করা।

হাড় দুর্বল হওয়া (Osteoporosis)

  • মেনোপজের পর এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায়, যা হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়।
  • এতে হাড় ভেঙে যাওয়া বা ফ্র্যাকচার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ওজন বৃদ্ধি (Weight Gain)

  • হরমোন পরিবর্তনের কারণে মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায়।
  • ফলে পেট ও কোমরের চারপাশে মেদ জমতে পারে।

মুড সুইং এবং ডিপ্রেশন (Mood Swings & Depression)

  • হরমোনের ওঠানামার কারণে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে।
  • কিছু নারীর মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা, রাগ এবং কান্নার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

ভ্যাজাইনাল সমস্যা (Vaginal Dryness)

  • এস্ট্রোজেনের অভাবে ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস দেখা দেয়।
  • এতে যৌন মিলনের সময় ব্যথা হতে পারে।
  • সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি (Increased Risk of Heart Disease)

  • এস্ট্রোজেন হ্রাস পেলে কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
  • এতে হৃদরোগ ও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

চুল ও ত্বকের পরিবর্তন

  • চুল পড়া বা পাতলা হওয়া
  • ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া এবং ত্বকে বলিরেখা দেখা দেওয়া।

মেমোরি সমস্যা (Memory Problems)

  • কিছু নারীর ক্ষেত্রে মেনোপজের পর স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে বা মনোযোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • একে কখনো কখনো ব্রেন ফগ (Brain Fog) বলা হয়।

মেনোপজ পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলার উপায়:

স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ:

  • ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: দুধ, দই, পালং শাক) খাওয়া হাড় মজবুত রাখে।
  • সবুজ শাকসবজি ও ফল খাওয়া হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
  • চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

নিয়মিত ব্যায়াম:

  • হাড় ও পেশি মজবুত রাখতে ওয়েট লিফটিং বা যোগব্যায়াম করতে পারো।
  • কার্ডিও ব্যায়াম (যেমন হাঁটা, সাঁতার) হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

হট ফ্ল্যাশের জন্য ঠান্ডা পরিবেশ:

  • হালকা কাপড় পরা এবং ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা।

স্ট্রেস কমানো:

  • ধ্যান বা মেডিটেশন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়া।
  • প্রয়োজনে একজন থেরাপিস্টের সাহায্য নেওয়া।

হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT):

  • প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী HRT নেওয়া যেতে পারে, যা এস্ট্রোজেনের অভাবজনিত সমস্যা কমায়।

ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেসের জন্য লুব্রিকেন্ট:

  • ডাক্তারের পরামর্শে ভ্যাজাইনাল ময়েশ্চারাইজার বা লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
পরিশেষে বলবো, মেনোপজ খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। যেটা একটা বয়সের পরে সব মহিলাদের গ্রহন করতে হবে। এই সময়ে যেহেতু হুট করে শারীরিক একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসে, সেটা নিয়ে অনেকেই হীনমন্যতায় ভোগেন, ডিপ্রেশনে পরে যান। কিন্তু পুরো বিষয়টাকে সহজভাবে গ্রহন করলে এবং পরিবারের কাছের মানুষের সাপোর্ট পেলে পুরো ব্যাপারটাই অনেক সহজ হয়ে যায়। ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।

আরো পোষ্ট পড়ুন :
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url